দৈনিক ৭-৮ ঘণ্টা একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের উচিত গভীর ঘুম দেওয়া দৈনিক ৭-৮ ঘণ্টা। তবে জীবনের এই বেড়াজালে পড়ে অনিয়মের কারণে অনেকেই ঠিকঠাক সময়মতো ঘুমাতে না।
আর ঠিকমত ঘুমাতে না পারায় বা একটানা না ঘুমানোর কারনে ঘুম পূরণের জন্য ঘন ঘন অল্প করে ঘুমানোর অভ্যাস করে ফেলেন। এই ঘন ঘন ঘুমের অভ্যাস উচ্চ রক্তচাপ বা হাই প্রেশার বাড়ানোর জন্য দায়ী হতে পারে। আর এর থেকে স্ট্রোকের ঝুঁকিও বেড়ে যায় অনেকটা। এমন তথ্যই দিয়েছে চীনের চাংশা সেন্ট্রাল সাউথ ইউনিভার্সিটির একদল গবেষক টিম। গবেষণাটি ‘হাইপারটেনশন’ নামক একটি আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষণায় যা পাওয়া গেছেঃ
সমীক্ষায় দেখা গেছে, যারা ঘন ঘন ঘুমান তাদের উচ্চ রক্তচাপ বা হাই প্রেশার ও স্ট্রোকের ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় বেশি। ঘুম শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে অসময়ের ঘুম স্বাস্থ্যকে আরও ঝুঁকিতে ফেলে দেয়।
ঘুম সম্পর্কে সমীক্ষা যা বলা হয়েছেঃ
গবেষণায় বলা হয়েছে, ঘুম স্বাস্থ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হলেও রাতে যারা অপর্যাপ্ত বা কম ঘুমান ও দিনে একাধিকবার অল্প অল্প করে ঘুমান তাদের মধ্যে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি বেশি। রাতে অপর্যাপ্ত বা কম ঘুম একজন ব্যক্তির সামগ্রিক স্বাস্থ্যে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।
গবেষণাটি ইউরোপের বায়োব্যাঙ্কের ৩ লাখ ৫৯ হাজার ৪৫১ জন অংশগ্রহণকারীদের উপর করা হয়েছে। যারা সবাই গবেষণার পূর্বে উচ্চ রক্তচাপ বা স্ট্রোক মুক্ত ছিলেন।
গবেষকরা দেখেছেন, নির্ঘুম বা একেবারে না ঘুমানোর চেয়ে ঘন ঘন ঘুমানো উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক ও ইস্কেমিক স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।
৪ বছরের এই গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের নিয়মিত ভিত্তিতে রক্ত, ইউরিন, লালার নমুনা ও ঘুমের সময়কাল নিয়ে অধ্যয়ন করা হয়।
অতিরিক্ত ঘুম যে কারনে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ায়ঃ
এই গবেষণাই ছাড়াও আরও অনেক গবেষণায় অতিরিক্ত ঘুমানোর ঝুঁকির কথা বলা হয়েছে। ১৯৯৬ সালের একটি সমীক্ষায় দেখা যায়, যারা দিনের বেলা ঘুমান তাদের মধ্যে হতাশা ও বিষণ্নতা বেশি দেখা দেয়। যারা দিনের বেলা ঘন ঘন ঘুমান তাদের সামগ্রিক স্বাস্থ্যের মধ্যেই খারাপ প্রভাব পড়ে।
ইউরোপীয় সোসাইটি অব কার্ডিওলজি কংগ্রেসে উপস্থাপিত এক গবেষণায় পাওয়া যায়, যারা অএঙ্ক সময় ধরে শুয়ে থাকেন তাদের মধ্যে কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি ৩৪ শতাংশ বেড়ে যায়।
আমাদের কখন ও কতক্ষণ ঘুমানো উচিত?
ঘুমের মধ্যে অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। তবে তা হতে হবে সঠিক সময়ে ও সঠিক নিয়মে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা দিনের বেলা ঘণ্টার পর ঘণ্টা না ঘুমিয়ে কয়েক মিনিটের পাওয়ার ন্যাপ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
তারা বলছেন, ঘুম ক্লান্তি দূর করে ও মস্তিষ্ককে কার্যক্ষম রাখতে সাহায্য করে। দিনের বেলা ঘুমানোর আদর্শ সময়কাল ৩০-৬০ মিনিটের মধ্যে। অর্থাৎ – দিনের বেলায় ১ ঘন্টার বেশি ঘুমানো উচিৎ না। যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। আর এই ৩০-৬০ মিনিট ঘুম একেবারেই ঘুমিয়ে নেওয়া উচিত। ঘন ঘন অল্প করে ১০-১৫ মিনিট করে ঘুমানো উচিৎ না। আর রাতে অবশ্যই একটানা ৬-৮ ঘণ্টা ঘুম একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের জন্য অতীব জরুরি।